মোঃ শাহজাহান বাশার ,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না— তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন চলছে। নির্বাচনের ঘনঘটায় এই দু’জনের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে চলছে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা ও বিশ্লেষণ।
উপদেষ্টা পরিষদের তরুণ সদস্য আসিফ মাহমুদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথা আগেই প্রকাশ করেছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান,“আমি নির্বাচন করতে আগ্রহী। তবে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি কোনো দলের প্রার্থী হব কি না, নাকি স্বতন্ত্রভাবে লড়ব।”
তার এই মন্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এবং সরকারের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকেও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তার ভাই মাহবুব আলম। কয়েকদিন আগে এনসিপির এক অভ্যন্তরীণ সভায় তিনি বলেন,“মাহফুজ আলম আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবছেন।”
এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে— যদি দুই শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় হন, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হবে।
সম্প্রতি বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তারা কিছু উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানান।
এই প্রেক্ষাপটেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়— সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুই শিক্ষার্থী উপদেষ্টাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের কারও পক্ষ থেকেই কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে সরকারি সূত্রের বরাতে জানা গেছে—“নির্বাচনের আগে নানা রাজনৈতিক সমীকরণে দুই উপদেষ্টাই আপাতত পদত্যাগের কথা ভাবছেন না। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তারা নির্বাচনী ময়দানে নামার সম্ভাবনা বিবেচনা করছেন।”
জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তিনজন তরুণ নেতা উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পান— মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম।
তাদের নিয়োগকে তরুণ প্রজন্মের ‘আন্দোলনের সফলতা ও পরিবর্তনের প্রতীক’ হিসেবে দেখা হয়েছিল।
তবে তিনজনের মধ্যে নাহিদ ইসলাম পরবর্তীতে পদত্যাগ করে যোগ দেন আন্দোলনের অগ্রভাগের নেতা ও তরুণদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে।
নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর থেকেই সরকারের ভেতরে শিক্ষার্থী উপদেষ্টাদের প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।রাজনীতিবিদদের মতে, নাহিদ ইসলাম ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এনসিপির ‘অনানুষ্ঠানিক সংযোগসূত্র’।
তিনি চলে যাওয়ায় সেই প্রভাব দুর্বল হয়েছে।
এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন—“যদি মাহফুজ ও আসিফও পদত্যাগ করেন, তাহলে এনসিপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কের মধ্যে বড় ধরনের টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এনসিপি নেতৃত্ব ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ইতিমধ্যেই ‘অবিশ্বাসের বাতাস’ বইছে।
সরকারি পদে থাকা শিক্ষার্থী উপদেষ্টারা যদি নির্বাচনে প্রার্থী হন, তাহলে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি এনসিপি’র সঙ্গে সম্পর্কেও ফাটল দেখা দিতে পারে।
একজন বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন—“শিক্ষার্থী উপদেষ্টাদের নির্বাচনমুখী মনোভাব সরকারের নৈতিক অবস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলবে। গণঅভ্যুত্থানের আদর্শের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক।”
অন্তর্বর্তী সরকারের তরুণ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
তারা কি সরকারি পদে থেকেই নির্বাচনে নামবেন, না কি আগে পদত্যাগ করবেন এই প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের রাজনীতির অনেক হিসাব-নিকাশ।
গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ছিল স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা। তরুণ উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু তাদের ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ নয়, বরং সরকারের নৈতিক অবস্থান ও জনগণের আস্থার প্রতিফলন নির্ধারণ করবে।